দোয়া কুনুত - দোয়া কুনুত বাংলা উচ্চারণ

 প্রিয় পাঠক ও পাঠিকা আসসালামু আলাইকুম, আজকের বিষয় হচ্ছে আমরা এশার নামাজ আদায় করার পরে ৩ রাকাত বিশিষ্ট একটি নামাজ যেটাকে বলা হয় বেতের নামাজ। এই ৩ রাকাত বেতেরের নামাজের ৩ তম রাকাত বা শেষ রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে একটি সূরা মিলানোর পরে অতিরিক্ত একটা তাকবীরে মাধ্যমে যে দোয়াটি পড়া হয় তাকে দোয়া কুনুত বলে।
সুতরাং আজকের আর্টিকেলে দোয়া কুনুত সম্পর্কে যে বিষয়গুলো আপনাদের মাঝে তুলে ধরবো সেগুলো হল- দোয়া কুনুত কত প্রকার, দোয়া কুনুত আরবি উচ্চারণ, দোয়া কুনুত বাংলা উচ্চারণ, দোয়া কুনুত কখন পড়তে হয়, দোয়া কুনুত এর বিকল্প সম্পর্কে। তাহলে চলো না দেরি না করে বিস্তারিত জেনে আসি দোয়া কুনুত ও দোয়া কুনুত বাংলা উচ্চারণ সম্পর্কে-

সূচিপত্র: দোয়া কুনুত - দোয়া কুনুত বাংলা উচ্চারণ

    দোয়া কুনুত কত প্রকার

    দোয়া কুনুত সাধারনত দুই প্রকারের হয়ে থাকে। কিন্তু দোয়া কুনুত এর দুটি প্রকারভেদী ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে পড়া হয়ে থাকে। তাহলে চলুন জেনে আসি দোয়া কুনুত এর প্রকারভেদ সম্পর্কে-
    • দোয়া কুনুত রোতিবাহ
    • দোয়া কুনুত নাজিলাহ
    ১.দোয়া কুনুত রোতিবাহ (নিয়মিত): দোয়া কুনুত রোতিবাহ বেতের নামাজে পড়া হয়। এই দোয়া সাধারণত বেতেরের নামাজের তৃতীয়তম রাকাত বা শেষ রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ার পর অন্য কোন সূরা পড়ে রুকুতে যাওয়ার পরিবর্তে পুনরায় হাত উপরে উঠিয়ে দোয়া কুনুত রোতিবাহ পড়া হয়। কিন্তু হাদিসের ভিত্তিতে বেতেরের সময় দোয়া কুনূত পাঠ করা সুন্নত বা মুস্তাহাব (প্রস্তাবিত)। 
    তাছাড়া হাদিসে বর্ণিত আছে, হযরত হাসান ইবনে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে কিছু শব্দ শিখিয়েছেন যা আমি বিতরের সময় পাঠ করি।

    ২. দোয়া কুনুত নাজিলাহ: যা বিশেষভাবে বিপর্যয়ের সময় বা আল্লাহর নিরাপত্তা চাওয়ার জন্য পাঠ করা হয়। জুমার নামাজসহ ফরজ নামাজের সময় কুনুত নাজিলাহ পাঠ করা হয়।কোনো সংকট বা বিপদ ঘটলে দুআ কুনুত নাজিলাহ পাঠ করা সুন্নত হয়ে যায়। আমরা যখন অন্যদের জন্য বা প্রতিকূলতা বা বিপর্যয়ের সম্মুখীন এমন একটি স্থানের জন্য সহায়তা প্রদানের ইচ্ছা করি তখনও এটি পাঠ করা যেতে পারে। এটি অন্যদের প্রতি মুসলিম হিসাবে সংহতি দেখানোর একটি উপায় হতে পারে।

    সুতরাং  আপনারা নিশ্চয়ই  দোয়া কুনুত এর প্রকারভেদ সম্পর্কে সঠিক তথ্যটি জানতে পেরেছেন। এখন নিম্নে আলোচনা করা হবে দোয়া কুনুত আরবি উচ্চারণ সম্পর্কে। আশা করি আর্টিকেলটি সম্পন্ন করার মাধ্যমে সকল বিষয় সম্পর্কে বুঝতে পারবেন।

    দোয়া কুনুত আরবি উচ্চারণ

    আমাদের মধ্যে এমন অনেক জন আছে যারা ঠিকমতো বাংলা পড়তে পারে না। কিন্তু স্পষ্টভাবে কুরআন মাজীদ করতে পারে যার ফলে তারা আরবি লিখা পড়তে পারে। সেজন্য দোয়া কুনুত আরবি উচ্চারণ নিম্নে দেয়া রয়েছে যাতে আপনাদের পড়তে সুবিধা হয়। তাহলে চলুন দেখে আসি দোয়া কুনুত আরবি উচ্চারণ:

    দোয়া কুনুত আরবি উচ্চারণ:
    اَللَّهُمَّ اِنَّ نَسْتَعِيْنُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ وَنُؤْمِنُ بِكَ وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْكَ وَنُثْنِىْ عَلَيْكَ الْخَيْرَ وَنَشْكُرُكَ وَلاَ نَكْفُرُكَ وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَّفْجُرُكَ-اَللَّهُمَّ اِيَّاكَ نَعْبُدُ وَلَكَ نُصَلِّىْ وَنَسْجُدُ وَاِلَيْكَ نَسْعَى وَنَحْفِدُ وَنَرْجُوْ رَحْمَتَكَ وَنَخْشَى عَذَابَكَ اِنَّ عَذَابَكَ بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ
    অর্থ: হে আল্লাহ! আমরা তোমারই সাহায্য চাই। তোমারই নিকট ক্ষমা চাই, তোমারই প্রতি ঈমান রাখি, তোমারই ওপর ভরসা করি এবং সকল মঙ্গল তোমারই দিকে ন্যস্ত করি। আমরা তোমার কৃতজ্ঞ হয়ে চলি, অকৃতজ্ঞ হই না। হে আল্লাহ! আমরা তোমারই দাসত্ব করি, তোমারই জন্য নামাজ পড়ি এবং তোমাকেই সিজদাহ করি। আমরা তোমারই দিকে দৌড়াই ও এগিয়ে চলি। আমরা তোমারই রহমত আশা করি এবং তোমার আযাবকে ভয় করি। আর তোমার আযাবতো কাফেরদের জন্যই র্নিধারিত।

    সুতরাং আপনারা হয়তো বুঝতে পেরেছেন দোয়া কুনুত আরবি উচ্চারণ সম্পর্কে। এখন দোয়া কুনুত বাংলা উচ্চারণ সম্পর্কে। আশা করি, আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়বেন।

    দোয়া কুনুত বাংলা উচ্চারণ

    অনেকে আছেন যারা কোরআন শরীফ পড়তে পারেন না। যার ফলে দোয়া কুনুত আরবি উচ্চারণ পারেন না। বয়সে বড় হওয়ার কারণে বা লজ্জাজনিত কারণে হলেও কাউকে বিষয়গুলো বলতে পারেন না বা শেয়ার করতে পারেন না যে আপনি আরবি জানেন না বা দোয়া কুনুত জানেন না। তাই আপনাদের সমস্যা চিন্তা করে দোয়া কুনুত বাংলা উচ্চারণ ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাহলে চলুন জেনে আসি দোয়া কুনুত বাংলা উচ্চারণ সম্পর্কে-
    আরো পড়ুন: আস্তাগফিরুল্লাহ পড়ার নিয়ম - আস্তাগফিরুল্লাহ পড়ার উপকারিতা
    দোয়া কুনুত বাংলা উচ্চারণ:
    উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতায়িনুকা ওয়া নাসতাগ ফিরুকা, ওয়ানু’মিনু বিকা ওয়া নাতাওয়াক্কালু আলাইকা ওয়া নুছনি আলাইকাল খাইর। ওয়া নাসকুরুকা ওয়ালা নাক ফুরুকা, ওয়ানাখলাউ উয়ানাত রুকু মাইয়্যাফযুরুকা। আল্লাহুম্মা ইয়্যাকানা’বুদু ওয়ালাকা নুছল্লি, ওয়ানাস জুদু ওয়া ইলাইকা নাসয়া; ওয়া নাহফিদু ওয়া নারজু রাহমাতাকা, ওয়া নাখশা আজাবাকা; ইন্না আজাবাকা বিলকুফফারি মুলহিক্।

    অর্থ: হে আল্লাহ! আমরা তোমারই সাহায্য চাই। তোমারই নিকট ক্ষমা চাই, তোমারই প্রতি ঈমান রাখি, তোমারই ওপর ভরসা করি এবং সকল মঙ্গল তোমারই দিকে ন্যস্ত করি। আমরা তোমার কৃতজ্ঞ হয়ে চলি, অকৃতজ্ঞ হই না। হে আল্লাহ! আমরা তোমারই দাসত্ব করি, তোমারই জন্য নামাজ পড়ি এবং তোমাকেই সিজদাহ করি। আমরা তোমারই দিকে দৌড়াই ও এগিয়ে চলি। আমরা তোমারই রহমত আশা করি এবং তোমার আযাবকে ভয় করি। আর তোমার আযাবতো কাফেরদের জন্যই র্নিধারিত।

    সুতরাং আশা করি আজকের আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি দোয়া কুনুত বাংলা উচ্চারণ এর মাধ্যমে দোয়া কুনুত মুখস্ত করতে পারবেন এবং বেতের নামাজে বিকল্প পদ্ধতি বেছে না নিয়ে দোয়া কুনুত বাংলা উচ্চারণ মুখস্ত করার মাধ্যমে সহজে বেতের নামাজ আদায় করতে পারবেন। 

    দোয়া কুনুত কখন পড়তে হয়

    অনেকে প্রশ্ন করে থাকেন দোয়া কোন কখন পড়তে হয়, সুতরাং আজকের আর্টিকেলে আপনাদের জানাবো দোয়া কোন কখন পড়তে হয়। তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে জেনে আসি দোয়া কুনুত কখন পড়তে হয় বা বেতের নামাজে দোয়া কুনুত কখন পড়তে হয় সম্পর্কে-
    বেতের সালাত মূলত ৩ রাকাত হয়ে থাকে এবং বেতের সালাত আদায় করা হয় এশার নামাজের পরে। সুতরাং বেতের সালাতে দোয়া কুনুত শেষ রাকাতে অর্থাৎ ৩য় রাকাতের কাবলার রুকুর আগেও পড়া যায় আবার বাদ রুকু পরেও পড়া যায়। এই বিষয়ে দুটি হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত রয়েছে।

    সুতরাং দোয়া কুনুত আমরা সাধারণ অর্থে বেতের নামাজে অধিকাংশ সময় পড়ে থাকি। সুতরাং আপনারা নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন দোয়া করুন কখন পড়তে হয়। এতোটুকু মনে রাখবেন যে দোয়া কুনুত এশার নামাজের পরে বেতের নামাজের শেষ রাকাতে পড়তে হয়।

    দোয়া কুনুত এর বিকল্প

    আমরা অনেকেই দোয়া কুনুত জানি না, আবার অনেক সময় জানা সত্ত্বেও নামাজের মধ্যে স্মরণ হয় না। সুতরাং এই বিষয়ে অনেকে দোয়া কুনুতের বিকল্প পদ্ধতি জানতে চাই বা দোয়া কুনুত এর বিকল্প দোয়া কোনটি তা জানতে চায়। তাই আজ আপনাদের দোয়া কোন বিকল্প সম্পর্কে জানাবো। তাহলে চলুন জেনে আসি বিকল্প দোয়া সম্পর্ক-

    বেতের নামাজের দোয়া কুনুত পড়াটা ফরজ নয় বা বেতের নামাজে দোয়া পড়তে হবে না হলে বেতের নামাজ হবে না বিষয়টা এমন নয়। তবে বেতের নামাজে দোয়া কুনুত পড়াটা সুন্নাতে মক্কাদাহ। সেজন্য আমরা বলতে পারি বেতের নামাজে দোয়া কুনুত ফরজ না হলেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তাছাড়া নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়া কুনুত পাঠ করেছেন এবং দোয়া কুনুত পাঠ করার ব্যাপারে হাদিসে উল্লেখ আছে।

    অনেকে জিজ্ঞেস করে থাকেন দোয়া কুনুত এর বিকল্প দোয়া কি?
    যদি আপনি দোয়া কুনুত না পারেন বা জানা সত্বেও নামাজের মধ্যে ভুলে যান তবে বিকল্প হিসেবে আপনাকে অন্য কোন দোয়া পড়ার দরকার নেই আপনি সরাসরি রুকুতে চলে যেতে পারেন। দোয়া কুনুত এর বিকল্প হিসেবে অন্য কিছু পড়তে হবে এরকম কোন বিধান হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত নয়।
    বেতেরের নামাজে তৃতীয়তম রাকাত তথা শেষ রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ার পরে অন্য কোন সূরা পড়ে রুকুতে যাওয়ার পরিবর্তে ”আল্লাহু আকবার” বলে হাত কান অব্দি উঠিয়ে থাকি এবং পুনরায় হাত বেধে দোয়া কুনুত পড়ে থাকে। সুতরাং দোয়া কুনুত এর জায়গায় যদি দোয়া কুনুত না জানা থাকে তবে দোয়া কুনুত এর বিকল্প হিসেবে অন্য কোন দোয়া পড়ার প্রয়োজন নেই, আপনি সরাসরি রুকুতে যেতে পারেন।

    আশা করি উপরের আলোচনার মাধ্যমে দোয়া কুনুত এর বিকল্প সম্পর্কে আপনারা নিশ্চয়ই সঠিক নিয়মটি জানতে সক্ষম হয়েছেন। আশা করি আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়বেন যার মাধ্যমে আমি পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন।

    শেষ কথা: দোয়া কুনুত - দোয়া কুনুত বাংলা উচ্চারণ

    প্রিয় বন্ধুরা, আমরা দোয়া কুনুত সম্পর্কে উপরে অনেক কিছুই জেনেছি এবং দোয়া কুনুত বাংলা উচ্চারণ সম্পর্কেও জেনেছি। আশা করি, আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা বিষয়ে তার সঠিক উত্তরটি পেয়েছেন। তাছাড়া আজকের আর্টিকেলে আরো যে বিষয়গুলো আলোচনা করা হয়েছে তা হলো- দোয়া কুনুত কত প্রকার, দোয়া কুনুত আরবি উচ্চারণ, দোয়া কুনুত বাংলা উচ্চারণ, দোয়া কুনুত কখন পড়তে হয়, দোয়া কুনুত এর বিকল্প সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এরকম আরো আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন এবং শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

    এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

    পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন