আয়াতুল কুরসির ফজিলত সংখ্যায় অনেক। আয়াতুল কুরসির ফজিলত বলে শেষ করা যাবে না নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়াতুল কুরসি ফজিলত সম্পর্কে সকলকে অবহিত করেছেন। সুতরাং আজকের আর্টিকেলে আমি গুরুত্বপূর্ণ আয়াতুল কুরসির ১০ টি ফজিলত বর্ণনা করবো।এটি কোরআনের সূরা আল-বাকারার আয়াত নম্বর ২৫৬। এই আয়াতটি মুসলিমদের মধ্যে অত্যন্ত মুখ্য একটি আয়াত। আয়াতুল কুরসির ১০ টি ফজিলত নিম্নে বর্ণিত হলোঃ
১. সুরা আয়াতুল কুরসি সমস্ত শারিরিক ও মানসিক অস্থিরতাকে বাধাগ্রস্ত করে ও রক্ষা করে। যারা এই আয়াতটি পড়ে এবং সেটির মানে সম্পূর্ণ মনে রাখে, তাদের উপর আল্লাহর কয়েকটি বিশেষ রক্ষা বসে রয়েছে।
২. আয়াতুল কুরসি মুসলিমদের সংকট, ভয়, দুশ্চিন্তা এবং প্রতারণার প্রতি রক্ষা করে এবং তাদেরকে নিরাপদে রাখে।
৩. আয়াতুল কুরসি মুসলিমদের ঈমান ও আত্মিক শক্তি বৃদ্ধি করে। এটি মানসিক শান্তি, আনন্দ ও ত্রাণ প্রদান করে এবং শয়তান ও অশুভ বশকে পরাজিত করে।
৪. আয়াতুল কুরসি বস্তুসম্পত্তির উন্নয়নে সাহায্য করে। যারা এটি পড়ে দৈনন্দিন জীবনে এটির অর্থ বুঝে নিয়মিত পাঠ করে, তাদের উপর আল্লাহর রহমত ও বরকতি বর্ষিত হয়ে ওঠে।
৫. আয়াতুল কুরসি মৃত্যুর আগে এবং মৃত্যুর পরে মুসলিমদের সুরক্ষা করে। এটি জীবনের সমস্যা ও বিপর্যয় থেকে মুসলিমদের রক্ষা করে এবং জান্নাতের দরজায় স্থান বিনয় করে।
৬. আয়াতুল কুরসি মুসলিমদের পড়া, শুনা এবং মনে রাখা জরুরি করে। যারা এটি দৈনন্দিন জীবনের একটি অংশ হিসাবে গ্রহণ করে এবং সেটির মানে মনে রাখে, তাদের জীবনে আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়।
৭. আয়াতুল কুরসি পাঠ করার পর মুসলিমদের উচ্চারণে আল্লাহর পক্ষ থেকে ফজিলত ও আজর বর্ষিত হয়। এটি মানসিক ও দৈনন্দিন কাজে সহায়তা করে এবং বারকাহ প্রদান করে।
৮. আয়াতুল কুরসি মুসলিমদের পাঠ করার পর উচ্চ আত্মবিশ্বাস ও স্বাধীনতা প্রদান করে। এটি মানসিক ও দৈনন্দিন কাজে সহায়তা করে এবং বারকাহ প্রদান করে।
৯. আয়াতুল কুরসি মুসলিমদের পাঠ করার পর সকল অশুভ ও ক্ষতিকর শক্তিকে বাধা দেয়। এটি মানসিক ও দৈনন্দিন কাজে সহায়তা করে এবং বারকাহ প্রদান করে।
১০. আয়াতুল কুরসি পাঠ করার পর মুসলিমদের মনে অপরিহার্য শান্তি এবং সম্পূর্ণ সুরক্ষা প্রদান করে। এটি মানসিক ও দৈনন্দিন কাজে সহায়তা করে এবং বারকাহ প্রদান করে।
আয়াতুল কুরসির ১০ টি ফজিলত, আয়াতুল কুরসির আরও অনেক ফজিলত এবং মাহত্ত্বপূর্ণ মাহামারি রয়েছে। মুসলিমদের জীবনে এই আয়াতটি মুসলিমদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন এই আয়াতটি পড়া এবং তার মানে সম্পূর্ণ মনে রাখা উচিত। আয়াতুল কুরসি একটি পবিত্র আয়াত যা ঈমান ও সুরক্ষার জন্য মুসলিমদের নিয়েছেন আল্লাহ তাআলা। আশা করি আমার আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের আয়াতুল কুরসির ১০ টি ফজিলত সম্পর্কে আপনাদের অবহিত করতে পেরেছি।
ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়ার ফজিলত
ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়ার ফজিলত সম্পর্কে অনেক ও মাহাত্ম্য বর্ণিত করা হয়েছে। সুতরাং নিম্নে ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়ার ফজিলত কিছু ফজিলত এবং মাহাত্ম্যগুলি দেওয়া হল-
১. ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়া একটি প্রামাণিক সূর্যপ্রাপ্তি বা প্রাপ্যতা দেয়। মানে, যদি একজন মুসলিম ফরজ নামাজ আদায় করে এবং এর পরে আয়াতুল কুরসি পড়ে, তাহলে তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি সুন্দর প্রতিষ্ঠা পায়।
২. ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়া জান্নাতের দরজায় স্থান পেয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে। অর্থাৎ, একজন মুসলিম যদি ফরজ নামাজ পড়ে এবং এর পরে আয়াতুল কুরসি পড়ে, তাহলে তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে যায়।
৩. ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়া পরিপূর্ণ শীতলতা এবং মানসিক শান্তি প্রদান করে। মানে, ফরজ নামাজ শেষ করে আয়াতুল কুরসি পড়লে মনটি শান্ত হয়ে যায় এবং আন্তরিক শান্তির অনুভূতি হয়।
এগুলি মাত্র কিছু ফজিলত যা ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়ার ফজিলত এর জন্য বর্ণিত করা হয়েছে। এজন্য একজন মুসলিম প্রতিদিন ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়ার ফজিলত গ্রহণ করা উচিত এবং ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়লে অত্যন্ত সুন্দর ফল পাবেন আল্লাহর দরবারে।
ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি পড়ার ফজিলত
আয়াতুল কুরসি হলো কুরআনের সুরা আল-বাকারার আয়াত নং ২৫৬ এর বাংলা অনুবাদ। এই আয়াতে মানে হলো:
"আল্লাহ! তুমি জীবন ও মৃত্যুর বেশীরই জ্ঞাত। আল্লাহর সমস্ত প্রশংসা তোমাকেই সম্পর্কিত। আল্লাহ বাধ্যতামূলক প্রশংসা পেয়েছেন প্রশাসকের সমস্ত অনুমতির চেয়ে বেশী। আল্লাহ যাহার উপস্থিতিতে বসেন বা চলেন না তিনি যত্নসহকারে তাঁর উপস্থিতিতে বসেন এবং আল্লাহর মহিমা সম্পন্ন বিষয়ে যাবেন তিনি নিরপেক্ষ নয়।"
এই আয়াতটির ফজিলত মোস্ত হাদিস গ্রন্থে প্রমাণিত আছে। কিছু ফজিলতঃ
- আয়াতুল কুরসি পড়লে মৃত্যু ও সায়ামরক প্রতিরোধ হয়ে থাকে।
- আয়াতুল কুরসি পড়লে আল্লাহর পাকে রক্ষা বিধান হয়ে থাকে।
- আয়াতুল কুরসি পড়ার মাধ্যমে মন্দ জিন্দাবাদ, জাদুতন্ত্রবাদ ও নজরের অপরাধ থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়।
- আয়াতুল কুরসি পড়ার পরিণামে অনেক বেশী সওয়াব লাভ হয়।
এছাড়াও আয়াতুল কুরসি পড়াটি ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আয়াত। এটি আল্লাহর একমাত্র আয়াত যা আসমান ও পৃথিবী সৃষ্টির সময় সৃষ্টি হয়েছিল। সুতরাং এই আয়াতটির পাঠ আমাদের ঘুমানোর আগে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলো একটি অনুশ্রান্ত অবস্থায় আল্লাহের দরবারে পড়া। এটি হাফেজ করলে আমাদের বিপদ থেকে রক্ষা হয়ে থাকে এবং ঘুম সুখপ্রদ হয়ে থাকে।
তবে, আয়াতুল কুরসি পড়া কেবলমাত্র ঘুমানোর আগেই নয়। সেই প্রথম পড়ার পরেও আমরা আয়াতুল কুরসি পড়তে পারি যেন আমাদের নিজের ওপর আল্লাহর কাছে রক্ষা থাকে। এছাড়াও আয়াতুল কুরসি পড়া ইসলামে প্রায় সব মুসলিমের মধ্যে একটি প্রচলিত আদত। ঘুমানোর পূর্বে আয়াতুল কুরসি পড়াটি পাঠ করে সাময়িক রক্ষা পাওয়ার জন্য আদর্শ মনে করা হয়।
আয়াতুল কুরসির বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ
প্রিয় পাঠক ও পাঠিকা আমাদের মধ্যে অনেকে আছে যারা পবিত্র কোরআন করতে পারে না। তাই অনেক সময় কোন হাদিস মুখস্ত বা পড়ার জন্য বাংলা উচ্চারণ অনুসন্ধান করে থাকেন। তাই নিম্নে আয়াতুল কুরসির বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ দেয়া হলোঃ
- আয়াতুল কুরসির আরবি উচ্চারণ
اَللهُ لآ إِلهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْمُ، لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَّلاَ نَوْمٌ، لَهُ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْأَرْضِ، مَنْ ذَا الَّذِىْ يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ، يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيْطُوْنَ بِشَيْئٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلاَّ بِمَا شَآءَ، وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ، وَلاَ يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا وَ هُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيْمُ-- আয়াতুল কুরসির বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ
বাংলা উচ্চারণ: আল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম। লা তা’খুযুহু সিনাতুঁ ওয়ালা নাঊম। লাহূ মা ফিস্ সামা-ওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ্বি। মান যাল্লাযী ইয়াশফাউ’ ই’ন্দাহূ ইল্লা বিইজনিহি। ইয়া’লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খালফাহুম, ওয়ালা ইউহিতূনা বিশাইয়্যিম্ মিন ‘ইলমিহি ইল্লা বিমা শা-আ’ ওয়াসিআ’ কুরসিইয়্যুহুস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদ্বি, ওয়ালা ইয়াউ’দুহূ হিফযুহুমা ওয়া হুওয়াল ‘আলিইয়্যুল আ’জিম। (সূরা আল-বাক্বারা আয়াত-২৫৫)।
- আয়াতুল কুরসির বাংলা অর্থ
অর্থ: আল্লাহ, যিনি ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও বিশ্বচরাচরের ধারক। কোনো তন্দ্রা বা নিদ্রা তাঁকে পাকড়াও করতে পারে না। আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সবকিছু তারই মালিকানাধীন। তাঁর হুকুম ব্যতিত এমন কে আছে যে, তাঁর নিকটে সুফারিশ করতে পারে? তাদের সম্মুখে ও পিছনে যা কিছু আছে সবকিছুই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসমুদ্র হতে তারা কিছুই আয়ত্ত করতে পারে না, কেবল যতুটুকু তিনি দিতে ইচ্ছা করেন তা ব্যতিত। তাঁর কুরসি সমগ্র আসমান ও জমিন পরিবেষ্টন করে আছে। আর সেগুলোর তত্ত্বাবধান তাঁকে মোটেই শ্রান্ত করে না। তিনি সর্বোচ্চ ও মহান’।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে নিয়মিত আয়াতুল কুরসি পড়ার তৌফিক দান করুন। (আমিন)
আয়াতুল কুরসির বাংলা উচ্চারণ ছবি
আয়াতুল কুরসি পড়ার সুবিধার্থে আপনাদের জন্য আয়াতুল কুরসির বাংলা উচ্চারণ ছবি আমার আর্টিকেলে অন্তর্ভুক্ত করলাম। কেননা তথ্যপ্রযুক্তির যুগে আয়াতুল কুরসির বাংলা উচ্চারণ ছবি যদি আপনারা আপনাদের ফোনে ডাউনলোড করে রাখেন তাহলে খুব সহজে যে কোন জায়গায় আপনি ছবিটি দেখে দেখে আয়াতুল কুরসির বাংলা উচ্চারণ করতে পারবেন। সুতরাং আপনাদের জন্য আয়াতুল কুরসির বাংলা উচ্চারণ ছবি নিম্নে দেওয়া হলোঃ
শেষ কথাঃ আয়াতুল কুরসীর ফজিলত - আয়াতুল কুরসির বাংলা উচ্চারণ
আজকের আর্টিকেল থেকে আপনারা জানতে পারলেন আয়াতুল কুরসীর ফজিলত - আয়াতুল কুরসির বাংলা উচ্চারণ, আয়াতুল কুরসীর ফজিলত সহিহ্ হাদিস, আয়াতুল কুরসী ১০ টি ফজিলত, ফজরের নামাজের পর পড়ার ফজিলত, ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি পড়ার ফজিলত, আয়াতুল কুরসির বাংলা উচ্চারণ ছবি সম্পর্কে খুব ভালোভাবে জানতে পেরেছেন। তাই আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। এবং এরকম আরো আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন। এতক্ষন সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।