কবর জিয়ারতের নিয়ম ও দোয়া - মহিলাদের কবর জিয়ারতের নিয়ম

প্রিয় পাঠক ও পাঠিকা আসসালামু আলাইকুম, আজকের আলোচ্য বিষয় কবর জিয়ারতের নিয়ম ও দোয়া, মহিলাদের কবর জিয়ারতের নিয়ম, ঘরে বসে কবর জিয়ারতের নিয়ম, কবর জিয়ারতের সূরা, কবর জিয়ারতের নিয়ম, মা বাবার কবর জিয়ারত করার নিয়ম, পিতা মাতার কবর জিয়ারতের দোয়া সম্পর্কে।
তাছাড়া আমরা অনেকেই কবর জিয়ারতের নিয়ম সঠিকভাবে জানে না। তাহলে চলুন জেনে আসি কবর জিয়ারতের নিয়ম গুলো সম্পর্কে।

সূচিপত্রঃ কবর জিয়ারতের নিয়ম - মহিলাদের কবর জিয়ারতের নিয়ম

কবর জিয়ারতের নিয়ম ও দোয়া

কবর জিয়ারতের নিয়ম
অনেকে আছেন কবর জিয়ারতের নিয়ম ও দোয়া সম্পর্কে সঠিক তথ্যটি জানেন না। সুতরাং আজকে আমার আর্টিকেলে কবর জিয়ারতের নিয়ম ও দোয়া সম্পর্কে আপনাদের অবহিত করব। কবর জিয়ারত করা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অন্যতম একটি সুন্নাত ।


কবর জিয়ারতের ফলে মানুষ গুনাহও অন্যান্য খারাপ কাজ হতে নিজেকে বিরত রাখে এবং আখিরাতের নিয়ে চিন্তা করে। সৎ কাজ ও নেক আমলের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করে। তাহলে চলুন জেনে আসি কবর জিয়ারতের নিয়ম গুলো সম্পর্কে-
  • বিশুদ্ধতা: কবরস্থানে প্রবেশের আগে ব্যক্তিগত বিশুদ্ধতা অনুসরণ করা হয়। অনেক দেশে কবরে প্রবেশের আগে স্নান করা, শব্দ বা গন্ধ ছাড়াই প্রবেশ করা এবং ব্যক্তিগত পোশাকে সম্মানিত হতে হয়।
  • মৃত ব্যক্তির কবরে যাওয়া: প্রথমে আপনাকে নিকটস্থ মুসলিম কবরস্থানে যেতে হবে যেখানে মৃত্যুবরণ করা হয়েছে। কবরস্থানে পৌঁছার পরে আপনাকে কবরের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকতে হবেন।
  • নিয়ত করা: কবর জিয়ারতে আপনাকে নিয়ত করতে হবে যে, আপনি কবর জিয়ারত করছেন মৃত ব্যক্তির স্মরণে। এটি মনে রাখতে হবে যে, কবর জিয়ারত একটি ধর্মীয় আনুষ্ঠান এবং আপনি এটি ধর্মগতভাবে অবলম্বন করছেন।
  • দোয়া ও সালাম: কবরে প্রবেশের পর প্রথমে আল্লাহর অনুগ্রহের প্রার্থনা (দোয়া) করা হয়। এরপর হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং অন্যান্য মুসলিম ভাইদের উপর সালাম প্রদান করা হয়। এটি প্রথানুযায়ী কবরে প্রবেশের পর প্রথম করণীয়।
  • আদাব ও সংগঠন: কবরস্থানে প্রবেশের পর আদাব ও সংগঠনের বিষয়ে বিশেষ করে সতর্ক থাকা উচিত। মুসলিমদের কবরে গিয়ে আদাবপূর্ণভাবে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা অনুসারে বসে থাকা উচিত। সাধারণত পাথর বা চারা দ্বারা পূর্বে পথ প্রদর্শন করা হয় এবং কবরগুলির ওপর সাজানো হয়। যেমনঃ পাথরের দিকে মুখ করে বসা, সাজানো এলকটা দিয়ে পথে নির্দিষ্ট করা ইত্যাদি।
  • দোয়া পাঠ করা: সুরা ফাতিহা, সুরা ইখলাস, আয়াতুল কুরসি ও অন্য যেসব সুরা সহজ মনে হয়, সেগুলো আদায় করা। এই দোয়া গুলো পাঠ করার পর আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) একটি কবর জিয়ারতে গিয়ে বলেন,
السَّلامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤمِنينَ وإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لاحِقُونَ

বাংলা উচ্চারণ : আসসালামু আলাইকুম দার ক্বাওমিম মুউমিনি না ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু বিকুম লাহিকুনা।
অর্থ : মুমিন ঘরবাসীর ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। ইনশাআল্লাহ, আমরা আপনাদের সঙ্গে মিলিত হবো। (সহিহ মুসলিম : ২৪৯)
  • কবরে যেসব করা নিষিদ্ধ: কবরবাসীর কাছে কিছু কামনা করা, নামাজ আদায় করা কিংবা সেজদা করা, তার অসিলায় মুক্তি প্রার্থনা করা, সেখানে দান-সদকা ও মানত করা, গরু-ছাগল, মোরগ ইত্যাদি দেওয়া বা কোরবানি করা ইত্যাদি শিরকেরই অন্তর্ভুক্ত। তাই কোনো কবরকে ঘিরে এমনটি করা ঠিক নয়।
সাধারণত, কবর জিয়ারতের নিয়ম ইসলামিক কল্যাণসংস্থাদের পরামর্শ এবং মুসলিম প্রদর্শনী গ্রহণ করে। তবে, প্রতিটি কবরস্থান ও সাংগঠনিক নিয়ম বিভিন্ন দেশ এবং সাংস্কৃতিক প্রথানুসারে আলাদাভাবে কবর জিয়ারতের নিয়ম পরিচালিত হতে পারে, সুতরাং সেখানে বিশেষ কবর জিয়ারতের নিয়ম গুলি অনুসরণ করা উচিত। আপনার পরিবেশের মুসলিম সমাজ বা মসজিদের প্রদর্শনীগুলি সন্ধান করুন যাতে আপনি সঠিকভাবে ও সম্পূর্ণরূপে কবর জিয়ারত পূর্বানুভব করতে পারেন।

কবর জিয়ারতের দোয়া
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশেষ কিছু কবর জিয়ারতের দোয়া করতেন। কবর জিয়ারতের দোয়া জানা অর্থ অবশ্যই। কেননা আপনি যদি কবর জিয়ারতের দোয়া না জানেন তবে আপনি মৃত ব্যক্তির জন্য আল্লাহর নিকট রহমত ও মাগফিরাত কামনা করতে পারবেন না। সুতরাং চলুন জেনে আসি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিশেষ কিছু কবর জিয়ারতের দোয়া সম্পর্কে-

السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ يَا أَهْلَ الْقُبُورِ يَغْفِرُ اللَّهُ لَنَا وَلَكُمْ أَنْتُمْ سَلَفُنَا وَنَحْنُ بِالأَثَرِ

উচ্চারণ: ‘আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর; ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়ালাকুম, আনতুম সালাফুনা ওয়া নাহনু বিল আসার।’
অর্থ: ‘হে কবরবাসী! তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহ আমাদের ও তোমাদের ক্ষমা করুন। তোমরা আমাদের আগে কবরে গিয়েছ এবং আমরা পরে আসছি।’ আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসূল (সা.) মদিনার কবরবাসীর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এই দোয়া পাঠ করেন।’ (তিরমিজি: ১০৫৩)
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) একটি কবর জিয়ারতে গিয়ে বলেন,
السَّلامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤمِنينَ وإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لاحِقُونَ
বাংলা উচ্চারণ : আসসালামু আলাইকুম দার ক্বাওমিম মুউমিনি না ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু বিকুম লাহিকুনা।
অর্থ : মুমিন ঘরবাসীর ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। ইনশাআল্লাহ, আমরা আপনাদের সঙ্গে মিলিত হবো। (সহিহ মুসলিম : ২৪৯)

কবর জিয়ারতের দোয়া pdf
কবর জিয়ারতের দোয়া pdf হিসেবে অনেকেই চান। কেননা পড়ার সুবিধার্থে কবর জিয়ারতের দোয়া pdf অত্যন্ত সহজ একটি উপায় যার মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই কবর জিয়ারতের দোয়া pdf আকারে পড়তে পারবে। নিচে কবর জিয়ারতের দোয়া pdf ফাইলটি দেয়া হলোঃ

মহিলাদের কবর জিয়ারতের নিয়ম

হযরত আইশা রাদিয়াল্লাহু আনহা একটি হাদিসে বলেছেন, "একজন স্ত্রীলোক তার মৃত স্বামীর কবর পরিদর্শন করতে যখন আসছিলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে সাহায্য করেছিলেন এবং তিনি কবর ভিজিয়েছিলেন মাছির জন্য।" এই হাদিস প্রমাণ করে যে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) নারীদের কবরে যাওয়া সম্পর্কে প্রশংসা ও প্রেম প্রকাশ করেছিলেন।


এদের সূচনা থেকে স্পষ্ট হয় যে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) নারীদের কবর জিয়ারত করার উপর কোনো নিষেধ বা নিষেধাজ্ঞা জারি করেন নি। সুতরাং মহিলাদের কবর জিয়ারতের নিয়ম গুলো জানা একান্তই প্রয়োজন। সেজন্য আমার আজকের আর্টিকেলে মহিলাদের কবর জিয়ারতের নিয়ম গুলো সম্পর্কে আপনাদের জানাবো। তাহলে চলুন জেনে আসি মহিলাদের কবর জিয়ারতের নিয়ম সম্পর্কে-
  • মহিলারা জিয়ারত করতে যাওয়া হয়ে উঠবেন কেবল মহিলাদের বিশেষ কবরস্থানে। ইসলামিক সংশ্লিষ্ট আলীগড়িস ও হাদিস থেকে জানা গিয়েছে যে, পুরুষদের কবরে যাওয়া মহিলাদের জন্য সমর্থন করা হয়না। তাই মহিলারা নিজেদের কবরে জিয়ারত করতে হবে।
  • কবরে যাওয়ার সময় মহিলাদের উপর পরিচ্ছন্নতা মেয়াদকে মেনে চলতে হবে। যেমন, নিখুঁত ওযু করতে হবে এবং প্রয়োজনে পরিবর্তন করতে হবে। 
  • মহিলাদের জিয়ারতের জন্য প্রদর্শিত পরিধান নিয়মগুলো বর্ণিত হলেও এগুলো বিভিন্ন দেশ ও সংস্কৃতি ভিত্তিক পরিবর্তন করতে পারে। সাধারণত মহিলাদের উপর ভেজাল, পরম্পরা, শাড়ী, ওজন কিংবা অন্যান্য সৃজনশীল পরিধান পর্যাপ্তভাবে বাঁধা হয়, যাতে তাদের শরীরের পার্দা রক্ষা করা যায়।
  • জিয়ারতের সময় মহিলারা নিজেদের জন্য নমাজ পড়তে পারেন। সাধারণত জিয়ারত একটি সুন্নত নামাজের সাথে যুক্ত হয়। মহিলাদের জন্য বিশেষ তরবীয়াত ও সুন্নত নামাজের নির্দেশাবলী উপস্থাপিত হয়েছে । তাই মহিলারা মহিলা-উপযুক্ত নমাজ পড়তে পারেন।
  • জিয়ারতের সময় মহিলারা কবরের সামনে নিয়ত পড়ে এবং কবর জিয়ারতের উল্লেখিত দোয়া করার মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির মাগফিরাতের কামনা করা।
  • জিয়ারতের পরে, মহিলারা মাগফিরতের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেন। তারা মার্শিয়া, তাওয়াবাত ও হাদিসসহ প্রমাণিত সুন্নতগুলো পাঠ করে মৃত্যুর পর কবরে মায়েতের ক্ষেত্রে দোয়া পড়েন। এছাড়াও মহিলারা মহিলা-উপযুক্ত দোয়া করতে পারেন যা তাদের মর্যাদা ও মানসম্মান উপর ভিত্তি করে।
সাধারণত, মহিলাদের কবর জিয়ারতের নিয়ম ক্ষেত্রে অনেকটা ছেলেদের মতই। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভিন্নতা দেখা যায় মহিলাদের কবর জিয়ারতের নিয়ম সম্পর্কে। তাছাড়া বাকি সকল নিয়ম ও দোয়া ক্রমশই একই।

মা বাবার কবর জিয়ারত করার নিয়ম

মা বাবার কবর জিয়ারত করার নিয়ম গুলো আমার আর্টিকেলে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। অনেকেই প্রত্যেক শুক্রবারে হয়তো নিজেদের আত্মীয়-স্বজন, বাবা-মা কবর জিয়ার করে থাকেন। তাই বাবা-মার কবর জিয়ারত করার নিয়ম সম্পর্কে আপনাদের জানা প্রয়োজন। তাহলে চলুন বাবা-মার কবর জিয়ারত করার নিয়ম গুলো জেনে আসি -

  • প্রথমেই, মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা মৃত ব্যক্তির মা বাবার কবর জিয়ারত করার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। এটা সময়ের এবং স্থানের নির্ধারণের মাধ্যমে করা হয়।
  • কবরে জিয়ারতের জন্য উপযুক্ত সময় নির্বাচন করুন। জিয়ারত করা হয়ে যাবে মুসলিম মসজিদের খুব ব্যস্ত সময়গুলোতে না হয়ে, যেমন জুমা নামাজের সময়, সকাল এবং সন্ধ্যায় জামাত নামাজের সময় এবং বিদগ্ধ ওয়াক্তে।
  • কবর জিয়ারতে গিয়ে আপনি শান্তি এবং আল্লাহর রহমতের জন্য দুআ করতে পারেন। আপনি মারম্যাদা বস্তিতে প্রতিষ্ঠিত থাকতে পারেন এবং স্মরণ করতে পারেন মারম্যাদা ব্যক্তির জীবনের প্রশংসা ও অনুসরণ করা কাজের।
  • আপনি কবরে চড়ে যাওয়ার পরে আয়াতুল কুরসী পড়তে পারেন। এটা ইসলামিক দোয়ার একটি অংশ যা মৃত ব্যক্তির জন্য পড়া হয়। এরপরে আপনি সূরা ফাতিহা ১বার, সূরা ইখলাস ৩বার, দুরূদ শরীফ ১১বার, আসতাগফিরুল্লাহ ১১বার পড়তে পারেন মৃত ব্যক্তির মাগফিরাত, জান্নাতে স্থান দান, সম্পর্কিত পরিবার ও সম্প্রদায়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে।
  • হাদিসে বর্ণিত আছে, কোন সন্তান যদি তার পিতা-মাতার কবরের সামনে দাঁড়িয়ে সুরা ফাতিহা একবার শুদ্ধভাবে পাঠ করে তাহলে মহান আল্লাহ তায়ালা তার পিতা-মাতার ৪০ দিনের কবরের আজাব মাফ করে দেন।
  • জিয়ারত করার পরে আপনি আল্লাহর কাছে মারম্যাদা ব্যক্তির জন্য দুয়া করতে পারেন। আপনি তার মাগফিরাত, জান্নাতে স্থান দান এবং তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারেন। এছাড়াও আপনি তার মা বাবার জন্য দুয়া করতে পারেন যারা তাকে শুভেচ্ছা দিতে আসেন।
 উপরোক্ত বাবা-মা কবর জিয়ারত করার নিয়ম গুলো আপনাদের মাঝে তুলে ধরা হয়েছে। আশা করি, আমার আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার মাধ্যমে সকল নিয়মগুলো সুন্দরভাবে বুঝতে পারবেন। তাছাড়া বেশি ভালো হবে স্থানীয় ইমাম, মাসজিদের প্রধান অথবা ইসলামিক শিক্ষার্থীদের সাহায্য নিতে পারেন। তারা আপনাকে এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য ও নির্দেশ দিতে পারবেন।

কবর জিয়ারতের সূরা

কবর জিয়ারতের সূরা হিসেবে কয়েক নির্দিষ্ট সুরা রয়েছে। যেমন সূরা ফাতিহা, সূরা ফালা , আয়াতুল কুরসি যা সূরা বাকারার অংশ, দুরুদ শরীফ এবং আস্তাগফিরুল্লাহ পড়ার মাধ্যমে জিয়ারত করতে হয়। যা কবর জিয়ারতের সূরা হিসেবে পরিলক্ষিত। তাহলে চলুন কবর জিয়ারতের সূরা গুলো বাংলা উচ্চারণ সহ জেনে আসি- 

সূরা ফাতিহা আয়াতসমূহ ও অর্থ

بِسْمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ ۝‎
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে।
  1. ٱلْحَمْدُ لِلَّٰهِ رَبِّ ٱلْعَالَمِينَ ۝
    আলহামদুলিল্লা-হি রব্বিল আ-লামীন।
    সমস্ত প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর জন্যে।
  2. ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ ۝
    আর রহমা-নির রহীম।
    অনন্ত দয়াময়, অতীব দয়ালু।
  3. مَالِكِ يَوْمِ ٱلدِّينِ ۝
    মা-লিকি ইয়াওমিদ্দীন।
    প্রতিফল দিবসের মালিক।
  4. إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ ۝
    ইয়্যা-কা না’বুদু ওয়া ইয়্যা-কানাছতা’ঈন।
    আমরা শুধু আপনারই দাসত্ব করি এবং শুধু আপনারই নিকট সাহায্য কামনা করি।
  5. ٱهْدِنَا ٱلصِّرَاطَ ٱلْمُسْتَقِيمَ ۝
    ইহদিনাসসিরা-তাল মুছতাকীম।
    আমাদের সরল পথনির্দেশ দান করুন।
  6. صِرَاطَ ٱلَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ ۝
    সিরা-তাল্লাযীনা আন’আম তা’আলাইহিম।
    তাদের পথে, যাদের আপনি অনুগ্রহ করেছেন।
  7. غَيۡرِ ٱلْمَغْضُوبِ عَلَيۡهِمۡ وَلَا اَ۬لضَّآلِّينَ ص۝
    গাইরিল মাগদূ বি’আলাইহীম ওয়ালাদ্দাল্লীন। (আমিন )
    এবং তাদের পথে নয় যারা আপনার ক্রোধের শিকার ও পথভ্রষ্ট । ( কবুল করুন 

সূরা ইখলাস

بِسْمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
قُلْ هُوَ ٱللَّهُ أَحَدٌ ۝
1 ক্বুল হুওয়াল্লাহু আহাদ
ٱللَّهُ ٱلصَّمَدُ ۝
2 আল্লাহুস সামাদ
لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ ۝
3 লাম ইয়ালিদ ওয়ালাম ইউলাদ
وَلَمْ يَكُن لَّهُۥ كُفُوًا أَحَدٌۢ ۝
4 ওয়ালাম ইয়াকুল লাহু কুফুওয়ান আহাদ

আয়াতুল কুরসি, দুরুদ শরীফ এবং আস্তাগফিরুল্লাহ পড়তে হয়। আশা করি এগুলো সম্পর্কে আপনাদের পূর্ব ধারনা আছে।

এছাড়াও মৃত ব্যক্তির জান্নাত লাভের জন্য আল্লাহর কাছে বিশেষ যে দোয়াটি করা হয় সেটি হল-
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِحَيِّنَا وَمَيِّتِنَا وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا وَصَغِيرِنَا وَكَبِيرِنَا وَذَكَرِنَا وَأُنثَانَا । اللَّهُمَّ مَنْ أَحْيَيْتَهُ مِنَّا
 فَأَحْيِهِ عَلَى الْإِسْلَامِ ، وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلَى الْإِيمَانِ ।

আল্লাহুম্মা ইগফির লিহাইনা ওয়া মাইতিনা ওয়া শাহিদিনা ওয়া গাইবিনা ওয়া ছাগীরিনা ওয়া কাবীরিনা ওয়া যাকারিনা ওয়া উনসানা । আল্লাহুম্মা মান আহয়্যতহু মিন্না ফাহ্যিহি আলা লিল ইসলামি। ওয়া মান তাওয়াফ্ফাইতহু মিন্না ফাতাওয়ফাহু আলা লিল ঈমানি ।

এই দু'আটি মুসলিম উদ্ধারকারীদের মধ্যে প্রচলিত একটি দু'আ বলা হয়, যার মাধ্যমে আল্লাহ্‌কে প্রার্থনা করা হয় যাতে তিনি মারা গিয়েছে ব্যক্তিকে সুন্দর জান্নাতে প্রবেশ দান করুন।

ঘরে বসে কবর জিয়ারতের নিয়ম

ঘরে বসে কবর জিয়ারতের নিয়ম সম্পর্কে বিভিন্ন ধর্মীয় সংস্কৃতি বিভিন্নভাবে অনুসরণ করে। সাধারণত, মুসলিমদের প্রথম কবর জিয়ারত করার জন্য গোরস্থানে যাওয়া হয় কারণ সেখানে মৃত ব্যক্তির কবর রয়েছে। 


তবে,যদি কোনো কারণে আপনি গোরস্থানে যেতে না পারেন, তবে আপনি আপনার ঘরে বসে কবর জিয়ারত করতে পারেন। ঘরে বসে কবর জিয়ারতের নিয়ম গুলো নিম্নে দেওয়া হলোঃ
  • তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ুন: কবর জিয়ারতে আগে আপনার রুয়াতুল হিলাল দ্বারা রয়েছে কিনা তা যাচাই করে নিন। যদি হয়, তবে রাতের তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ুন।
  • বিদা'তুল মাজালিস করুন: একটি মারকাজে বা আপনার বাড়িতে বিদা'তুল মাজালিস অনুষ্ঠান করুন। এতে আপনি কোনো ইমাম বা আলিম বাংলাদেশের মাজালিস বইয়ের অনুযায়ী কবর জিয়ারতের দোয়া ও জিকির করতে পারেন।
  • দুয়া পড়ুন: আপনি নিজেও একান্তভাবে দুয়া করতে পারেন কিংবা আপনার কাছে আলিম বা ইমাম থাকলে তাঁকে আমন্ত্রণ জানাতে পারেন যাতে তিনি কবর জিয়ারতের দোয়া পড়তে পারেন।
  • সদকাহ দিন: কবর জিয়ারতের পর আপনি মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করে দিন ও আত্মার খাতিরে সদকাহ দিতে পারেন। এটি মৃত্যু করার জন্য সদকাহ দানের একটি সুন্দর উপায়।
সাধারণত, উপরোক্ত ধাপগুলো ঘরে বসে কবর জিয়ারতের নিয়ম হিসেবে পরিচিত। তবে আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো হয় আপনার স্থানীয় মসজিদ বা ইমামের পরামর্শ নিয়ে কবর জিয়ারত করা।

কবর জিয়ারতের মোনাজাত

কবর জিয়ারতের মোনাজাত বাংলা সাহিত্যে একটি প্রচলিত রূপান্তরিত আইন্দ্রীয় শান্তি অভিব্যক্তি। এই মোনাজাতটি মুসলিম ধর্মীয় আদর্শ মৃত্যুবরণের সময় পাঠ করা হয়। এটি সাধারণত কবরে বিধানিত ব্যক্তির ক্ষমা, আল্লাহর মেহেরবানি এবং জান্নাতের দরজায় প্রবেশের জন্য প্রার্থনা করে। কবর জিয়ারতের মোনাজাত বাংলায় দেওয়া হলো:

হে আল্লাহ, এই কবরে বিধানিত ব্যক্তির ক্ষমা করুন।
আমাদের দু'আ গ্রহণ করুন এবং তাঁর জন্য জান্নাতের দরজাটি খুলুন।
আমাদের পাশে থাকুন এবং তাঁকে আপনার মেহেরবানির আলো দান করুন।
আপনি তাঁর গোপন প্রশ্ন দেখেন এবং তাঁকে আপনার বারকাহ দান করুন।
তাঁর পাঠাও পুরস্কার দিয়ে দিন এবং তাঁর অভিব্যক্তি উজ্জ্বল করুন।
আপনি সবকিছু জানেন, আল্লাহ, এবং আপনি সর্বশক্তিমান, আপনি মেহেরবান এবং দয়ালু।তাই আমাদের প্রার্থনা স্বীকার করুন এবং আমাদের প্রার্থনার উদ্দেশ্য পূরণ করুন।
এই মোনাজাতে আমরা কবরে বিধানিত ব্যক্তির ক্ষমা করতে আল্লাহর দরবারে আহ্বান জানাচ্ছি, আল্লাহর মেহেরবানি এবং জান্নাতের দরজায় প্রবেশের জন্য আপনার প্রার্থনা করছি।

এই কবর জিয়ারতের মোনাজাত মৃত্যুবরণের সময় পাঠ করা হয় যাতে আল্লাহ আপনার ক্ষমার দ্বারা মৃত ব্যক্তির জন্য মেহেরবানি ও পুরস্কার দান করেন। এটি মৃত্যুবরণের সময় আল্লাহর আদর্শ বিশ্বাসীদের মধ্যে একটি প্রায় নিত্যতান্ত্রিক আচরণ হিসেবে প্রচলিত হয়। এটি সাধারণত একটি ধারণা যে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রার্থনা শোনার জন্য সব সময় প্রস্তুত আছেন এবং তাঁরা তাঁর কাছে আশ্রয় নিতে পারেন।

পিতা-মাতার কবর জিয়ারতের দোয়া

পিতা মাতার কবর জিয়ারতের দোয়া টি পড়ার জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময় বা স্থান নেই। আপনি পিতা-মাতার মকবরায় যাওয়ার পূর্বে বা পরে এই দোয়াটি পড়তে পারেন। সাধারণত মানুষেরা পিতা মাতার কবর জিয়ারতের দোয়া হিসেবে পড়ে থাকেন:

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِفلَانِ (মৃত ব্যক্তির নাম)، وَارْحَمْهُ، وَعَافِهِ، وَاعْفُ عَنْهُ، وَأَكْرِمْ نُزُلَهُ، وَوَسِّعْ مَدْخَلَهُ، وَاغْسِلْهُ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ، وَنَقِّهِ مِنَ الْخَطَايَا كَمَا نَقَّيْتَ الثَّوْبَ الْأَبْيَضَ مِنَ الدَّنَسِ، وَأَبْدِلْهُ دَارًا خَيْرًا مِنْ دَارِهِ، وَأَهْلًا خَيْرًا مِنْ أَهْلِهِ، وَزَوْجًا خَيْرًا مِنْ زَوْجِهِ، وَأَدْخِلْهُ الْجَنَّةَ، وَأَعِذْهُ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَعَذَابِ النَّارِ।

আল্লাহুম্মা ইগফির লিফুলানি (মৃত ব্যক্তির নাম)। ওয়ারহামহু, ওয়াআফিহি, ওয়াআফু আনহু, ওয়াআকরিম নুজুলাহু, ওয়াওসসিয় মাদখালাহু, ওয়াইগসিলহু বিলমাইয়িওয়াথ্‌ থালজিওয়ালবরদ, ওয়ানাক্কিহি মিনালখতায়া কমানাকানাকানাকামানা নাকামানা, ওয়াব্দিলহু দারান খায়রান মিনদারিহী, ওয়াঅহলান খায়রান মিনআহলিহী, ওয়ায়াজুয়ান খায়রান মিনজুয়াহী, ওয়াআদখিলহুলজান্নাত, ওয়াআয়েয়হু মিনাযাবিলকাবরি ওয়াআয়েয়হু মিনাযাবিন্নার।

এই দোয়াটির অর্থ হল:
"হে আল্লাহ্‌, তুমি (মৃত ব্যক্তির নাম) কে ক্ষমা করো, তার উপর রহমত করো, তাকে সুস্থ করো, তার প্রতি ক্ষমা করো, তার গৃহের অবস্থান মর্যাদা বড় করো, তার মধ্যে আগমন বিস্তার করো, তাকে পানি, বরফ এবং তুষারের মাধ্যমে ধোয়া করো, তাকে পাপ থেকে পরিষ্কার করো যতমত তুষার সফেদ বস্ত্রকে পরিষ্কার করো, তার জন্য তার আবাসস্থানকে ভালোবাসা হতে ভালো করো, তার পরিবারকে তার আবাসস্থানের চেয়ে ভালো করো, তার স্ত্রীকে তার স্বামীর চেয়ে ভালো করো, তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাও এবং তাকে কবরের আযাব থেকে এবং আগুনের আযাব থেকে রক্ষা করো।"

তাছাড়া হাদিসে বর্ণিত আছে, কোন সন্তান যদি পিতা-মাতার কবর জিয়ারতের দোয়া হিসেবে কবরে সামনে দাঁড়িয়ে সুরা ফাতিহা একবার পাঠ করে আল্লাহ তায়ালা ওই ব্যক্তির পিতা-মাতার ৪০ দিনের কবরের আজাব মাফ করে দেন।

পিতা মাতার কবর জিয়ারতের দোয়া টি পাঠ করে পিতা-মাতার কবরের জন্য আপনি আল্লাহ্‌ তাআলা কে অনুরোধ করছেন তাদের মাফ করতে, করুণা করতে, সুস্থ রাখতে, প্রাণ দিতে, উন্নত মর্যাদা দিতে, ধোয়া করতে, পাপ মুক্ত করতে, অবস্থান পরিবর্তন করতে, কবরে কলিয়ে দেতে এবং সব ধরনের আযাব থেকে রক্ষা করতে আল্লাহ্‌ তাআলা অনুরোধ করা হয়। এই দোয়া দ্বারা আপনি আল্লাহ্‌ তাআলা কে আপনার পিতা-মাতার কবরের পশ্চাতে তাদের জন্নাতুল ফেরদৌসে অবস্থান দিতে অনুরোধ করছেন।

শেষ কথাঃ কবর জিয়ারতের নিয়ম ও দোয়া  - মহিলাদের কবর জিয়ারতের নিয়ম

আজকের আর্টিকেল থেকে আপনারা জানতে পারলেন জিয়ারতের নিয়ম ও দোয়া, মহিলাদের কবর জিয়ারতের নিয়ম, ঘরে বসে কবর জিয়ারতের নিয়ম, কবর জিয়ারতের সূরা, কবর জিয়ারতের নিয়ম, মা বাবার কবর জিয়ারত করার নিয়ম, পিতা মাতার কবর জিয়ারতের দোয়া সম্পর্কে খুব ভালোভাবে জানতে পেরেছেন। তাই আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন এবং এরকম আরো আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন। এতক্ষন সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন