কালোজিরার উপকারিতা ও অপকারিতা - কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম
প্রিয় পাঠক ও পাঠিকা আসসালামু আলাইকুম, কালোজিরা কে আমরা কেনা চিনি। ইংরেজিতে কালোজিরা "Nigella seeds" নামে পরিচিত। বাঙালির পাঁচফোড়ন থেকে শুরু করে সিঙ্গারা ও নানান রকম খাবারে কালোজিরা না হলে চলেই না। আয়ুর্বেদিক, ইউনানী ও কবিরাজি চিকিৎসায় কালোজিরার ব্যাপক ব্যবহার হয়ে থাকে। তাছাড়া ইসলাম ধর্মের কালোজিরা গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে বুঝানো হয়েছে যে "তোমরা কালোজিরা ব্যবহার করবে, কেননা এতে একমাত্র মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের মুক্তি রয়েছে"।
সুতরাং আজকের আর্টিকেলে আপনাদের জানাবো কালোজিরার পুষ্টিগুণ, কালোজিরার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। তাহলে চলুন কালোজিরার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত জেনে আসি।
সূচিপত্রঃ কালোজিরার উপকারিতা ও অপকারিতা - কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম
কালোজিরার পুষ্টিগুণ
কালোজিরায় প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ রয়েছে। আজকের আর্টিকেল আপনাদের জানাবো কালো জিরায় কি কি উপাদান রয়েছে। তাহলে চলুন জেনে আসি প্রতি গ্রাম কালোজিরার পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে-
আমিষ | ২১ শতাংশ |
শর্করা | ৩৮ শতাংশ |
স্নেহ বা ভেষজ তেল ও চর্বি | ৩৫ শতাংশ |
প্রোটিন | ২০৮ মাইক্রোগ্রাম |
ভিটামিন বি১ | ১৫ মাইক্রোগ্রাম |
নিয়াসিন | ৭৫ মাইক্রোগ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ১.৮৫ মিলিগ্রাম |
আয়রন | ১০৫ মাইক্রোগ্রাম |
ফসফরাস | ৬.২৬ মাইক্রোগ্রাম |
কপার | ১৮ মাইক্রোগ্রাম |
জিংক | ৬০ মাইক্রোগ্রাম |
ফোলাসিন | ৬১০ আইউ |
সুতরাং উপর তারিখ অনুযায়ী। আপনারা নিশ্চয় কালোজিরা পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন। নিম্নে কালোজিরার উপকারিতা ও কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি, আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়বেন।
কালোজিরার উপকারিতা
কালোজিরা কে বলা হয় মৃত্যু ব্যতীত সর্ব রোগের মহা ঔষধ। প্রাচীনকাল থেকে কবিরাজি আয়ুর্বেদিক ও ইউনানী চিকিৎসায় কালোজিরা ব্যবহার হয়ে আসছে। কিন্তু কালোজিরার উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের খুব একটা ধারণা না থাকায় আমরা শুধুমাত্র রান্নার একটি মসলা হিসাবে কালোজিরা ব্যবহার করে থাকি। সুতরাং আজ আপনাদের কালোজিরার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো। নিম্নের ২৫টি কালোজিরার উপকারিতা বর্ণনা করা হলো:
- মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বাড়ে
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে
- হজম শক্তি বাড়ে
- জ্বর ও সর্দি-কাশিতে উপকার
- বুকের দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি করে
- ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে
- ব্যথা নাশক হিসেবে কাজ করে
- চুল পড়া প্রতিরোধ করে
- স্মরণশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে
- ওজন কমাতে সাহায্য করে
- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
- ঘুম জনিত সমস্যা
- লিভারের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
- জনশক্তি বৃদ্ধি করে
- হৃদরোগের উপকার
- মাথা ব্যথা কমায়
- ত্বকের যত্ন
- হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণ করে
- কিডনির সমস্যা সমাধান
- চোখের সমস্যা দূর করে
- অনিয়মিত মাসিক ঠিক করে
- ব্রণের সমস্যা দূর করে
- ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করে
- মেদ কমাতে সাহায্য করে
১. মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বাড়ে:
নিয়মিত কালোজিরা খেলে মস্তিষ্কের রক্ত চলাচল বাড়িয়ে দেয়। যার ধরুন স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া কালোজিরা শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে এবং ক্লান্তি দূর করে থাকে। তাছাড়া কালোজিরা আমাদের শরীরকে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিকভাবে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে থাকে।
২. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে:
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কে শক্তিশালী করে কালোজিরা। কালোজিরা খেলে শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সতেজ থাকে। এতে করে যে কোন জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে দেহকে প্রস্তুত করে তোলে এবং সার্বিকভাবে স্বাস্থ্যের উন্নতি করে থাকে।
৩. হজম শক্তি বাড়ে:
যাদের হজমের সমস্যা আছে তাদের জন্য কালোজিরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যাদের হজম শক্তি দুর্বল তারা ১-২ চা চামচ কালোজিরা বেটে পানির সঙ্গে খেতে থাকুন। এভাবে প্রতিদিন ২-৩ বার খেলে এক মাসের মধ্যে হজম শক্তি বেড়ে যাবে,পাশাপাশি পেট ফাঁপা ভাবও দূর হবে।
৪. জ্বর ও সর্দি-কাশিতে উপকার:
জ্বর ও সর্দি-কাশি আমাদের প্রতিনিয়তায় হয়ে থাকে এবং এই সমস্যাগুলো সমাধানের টি সুন্দর উপায় রয়েছে যা হল কালোজিরা। আপনি জ্বর ও সর্দি-কাশি জন্য ১ চা চামচ কালোজিরার সঙ্গে ৩ চা চামচ মধু ও ২ চা চামচ তুলসীপাতার রস মিশিয়ে প্রতিদিন একবার সেবন করলে দারুন ফল পাওয়া যাবে।
৫. বুকের দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি করে:
মায়েদের বুকের দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে কালোজিরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বুকের দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি করার জন্য প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে ৫-১০ গ্রাম কালোজিরা মিহি করে দুধের সঙ্গে খেতে থাকুন। ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে বুকের দুধের প্রবাহ বেড়ে যাবে। এছাড়া এই সমস্যার সমাধানের কালোজিরার ভর্তা করে ভাতের সাথে খেতে পারে।
৬. ক্যান্সার প্রতিরোধ করে:
কালোজিরা তে প্রায় ১০০ টি রোগের প্রতি প্রতিষেধক থাকে। তার মধ্যে একটি প্রতিষেধকের নাম হল কেরোটিন (Keratin), যা মানব দেহে ক্যান্সার প্রতিরোধ করে থাকে। তাই এই মারাত্মক ব্যাধি থেকে বাঁচার জন্য নিয়মিত কালোজিরা খেতে পারেন আপনার শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করবে।
৭. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে:
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কালোজিরা উপকারে ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন খালি পেটে কালোজিরা খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যায়। রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। ডায়াবেটিস রোগীরা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রতিদিন খালি পেটে কালোজিরা খেতে পারেন।
৮. ব্যথা নাশক হিসেবে কাজ করে:
যেকোনো ধরনের ব্যথা কমাতে কালোজিরা তেল অত্যন্ত উপকারী। কালোজিরার তেল বাতের ব্যথায় খুব ভালো কাজ করে থাকে। তাছাড়া যে কোনো ব্যাথা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কালোজিরা তেল হালকা গরম করে ব্যথাযুক্ত স্থানে মালিশ করলে দারুন উপকার পাওয়া যায়।
৯. চুল পড়া প্রতিরোধ করে:
চুলের জন্য কালোজিরার উপকারিতা অপরিসীম। অত্যন্ত উপকারে কালোজিরা চুল পড়া প্রতিরোধ করে। নিয়মিত কালোজিরা ও অলিভ অয়েল তেল একত্রে সেবন করলে চুল পড়া কমবে এবং চুলের গোড়া শক্ত হবে। যা আপনাকে চুল পড়ার দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত করবে।
১০. স্মরণশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে:
কালোজিরা মানবদেহের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে। তাই প্রতিদিন কালোজিরা বা কালোজিরা তেল খেলে শরীরের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে এবং তা স্মরণ শক্তি বৃদ্ধি করতে ব্যাপক সহায়তা করে। সুতরাং আমাদের প্রত্যেকের উচিত নিয়মিত কালোজিরা সেবন করা যা আমাদের স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করে থাকে।
১১. ওজন কমাতে সাহায্য করে:
ওজন কমানোর জন্য অনেকে গরম পানির সাথে মধু ও লেবু মিশিয়ে খেয়ে থাকেন। কিন্তু এই মিশ্রণে আরেকটি উপাদান যোগ করলে আপনারা শতভাগ ওজন কমাতে সক্ষম হবেন সে উপাদানটি হলো কালোজিরা। এই মিশ্রনের সাথে যদি আপনি ১ চা চামচ কালোজিরা ব্যবহার করেন তবে দেখবেন দ্রুত আপনার ওজন কমতে সাহায্য করছে।
১২. উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে:
কালোজিরা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। কালোজিরা নিয়মিত খেলে তা উচ্চ রক্তচাপ রোগীদের রক্তচাপ কম করতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে কালোজিরা রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখতে বেশ কার্যকরী। এক্ষেত্রে কালোজিরা তেলের চেয়ে কালোজিরা বীজের গুঁড়ো শক্তিশালী প্রভাব ফেলে। রাতে ঘুমানোর আগে ৫ থেকে ১০ গ্রাম কালোজিরার গুঁড়ো গরম পানি বা দুধের সাথে খেতে পারেন, এভাবে এক মাস খেলে আপনি উচ্চ রক্তচাপ সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
১৩. ঘুম জনিত সমস্যা:
অনেকের ঘুম জনিত সমস্যা আছে। কেননা রাত জাগা অভ্যাসের ফলে অনেকে চাইলেও ঘুমাতে পারে না বা দ্রুত ঘুম আসে না। তাদের জন্য একটি কার্যকরী উপাদান হলো কালোজিরা ঘুম জনিত সমস্যা দূর করার জন্য কালোজিরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি ঘুম জনিত কে সমস্যা দূর করার জন্য ২ চা চামচ কালোজিরার তেল মধুর সাথে মিশিয়ে নিয়মিত সেবন করতে পারেন। যা আপনার ঘুম জনিত সমস্যাকে সহজে দূর করতে পারে।
১৪. লিভারের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে:
কালোজিরা রিভার ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। কালোজিরা লিভারের ক্যান্সারের আটলাটক্সিন নামক বিশ ধ্বংস করে। যার ফলে লিভারের ক্যান্সার প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সেজন্য যাদের লিভারের সমস্যা আছে তারা আজ থেকে প্রতিদিন ৫-১০ গ্রাম কালোজিরা খাওয়া শুরু করুন।
১৫. যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে:
কালোজিরা যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে থাকে। তবে জনশক্তি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কালোজিরা খাওয়ার কিছু নিয়ম রয়েছে। জনশক্তি বৃদ্ধিতে আপনি প্রতিদিন দুইবার করে পান পাতার সাথে সমপরিমাণ কালোজিরা চিবিয়ে খান এবং সকালে খালি পেটে কালোজিরা খাওয়ার পাশাপাশি কিসমিস ও বাদাম খাবেন। নিয়মিত কালোজিরা খেলে পুরুষের স্প্যাম শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং পুরুষহীনতা থেকে মুক্তির সম্ভাবনা তৈরি করে।
১৬. হৃদরোগের উপকার:
কালোজিরা নিয়মিত সেবনে হৃদরোগের উপকার পাওয়া যায়। হৃদরোগের উপকার পেতে চা এবং অফিস সাথে কালোজিরার তেল মিশিয়ে পান করলে হৃদরোগের উপকার পাওয়া যায়। সুতরাং যারা নিয়মিত কালোজিরা সেবন করেন না তারা আজ থেকে শারীরিক সুস্থতার জন্য নিয়মিত কালিজিরা সেবন করা শুরু করুন।
১৭. মাথা ব্যাথা কমায়:
কালোজিরা মাথা ব্যাথা কমাতে সাহায্য করতে পারে, এটি মাইগ্রেন বা হেডাচ রোগীদের জন্য উপকারী হতে পারে। তাছাড়াও, মাথা ব্যথা সমস্যা সাধারণ চাপ, স্ট্রেস, ও এলজেইমার রোগের জন্য সমাধান করতে কালোজিরা ব্যবহার করা হতে পারে।
১৮. ত্বকের যত্ন:
ত্বকের যত্ন হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণ কিডনির সমস্যা সমাধানকালোজিরা ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। এটি ত্বকের অবন্ধন, দাগ, ব্রণ, এবং অন্যান্য ত্বক সমস্যার উপচারে ব্যবহার করা হতে পারে। কালোজিরা ত্বকের উদ্দীপনা করতে সাহায্য করতে পারে এবং ত্বকের মেলানিন উত্থানন কমিয়ে ত্বকের গর্ভস্থ ক্ষতি সংক্রান্ত সমস্যার উপচারে সাহায্য করতে পারে।
১৯. হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণ:
কালোজিরা হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করতে পারে। এটি হাঁপানি সমস্যা, হ্যায়ামে হাঁপানি, ব্রোঙকাইটিস, কাফে উচ্ছ্বাস বা শ্বাসকষ্ট সমস্যার উপচারে উপকারী ভূমিকা পালন করে। সেজন্য প্রতিদিন ১ চা চামচ কালোজিরার সাথে ৩ চা চামচ মধুর মধু মিশিয়ে খেলে হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
২০. কিডনির সমস্যা সমাধান:
কালোজিরা কিডনির স্বাস্থ্যকে উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। এটি কিডনির পানি বর্জন করতে সাহায্য করতে পারে এবং কিডনির স্বাস্থ্য উন্নত করতে পারে।
২১. চোখের সমস্যা দূর করে:
কালোজিরা চোখের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। এটি চোখের দৃষ্টি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করতে পারে এবং চোখের কারিগরী প্রদর্শনীগুলির স্বাস্থ্য উন্নত করতে পারে। সুতরাং প্রতিদিন ৫-১০ গ্রাম কালোজিরা খাওয়া রহস্যকীয় চোখ সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে।
২২. অনিয়মিত মাসিক ঠিক করে:
কালোজিরা মহিলাদের অনিয়মিত মাসিক সমস্যা দূর করতে সাহায্য করতে পারে। এটি হরমোনাল স্তর ব্যালান্স করতে সাহায্য করতে পারে এবং স্ত্রীর মাসিকের স্বাভাবিক সময়সীমা প্রদান করতে পারে। সেজন্য নিয়মিত কালোজিরা সেবন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২৩. ব্রণের সমস্যা দূর করে:
অনেকে আছেন যারা ব্রণের সমস্যার জন্য চিন্তিত। অনেক ধরনের ঔষধ ব্যবহার করেও গ্রহণের সমস্যা সমাধান করতে পারেনি। কালোজিরা ব্রণের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করতে পারে। এটি ব্রণ সমস্যার সাথে সাথে ত্বক উদ্দীপনা ও ত্বকের মেলানিন উত্থানন কমিয়ে ব্রণ দূর করতে পারে।
২৪. ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করে:
কালোজিরা ব্লাড প্রেসার (রক্তচাপ) নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করতে পারে এবং এটি উচ্চ রক্তচাপ (হাইপারটেনশন) বা নিম্ন রক্তচাপ (হাইপোটেনশন) রোগীদের জন্য উপকারী হতে পারে। ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কালোজিরা কৃষি বা খাদ্য উপকরণের মাধ্যমে ব্যবহার করা হতে পারে, কারণে এটি রক্তচাপ স্তর উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।
ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণের প্রক্রিয়াটি সাধারণভাবে এই ভাবে কাজ করে - যখন কালোজিরা খাওয়া হয়, এটি শরীরে নিত্য উপসর্গ স্থায়ীভাবে পরিবর্তন করে। এই উপসর্গের ফলে, রক্তপ্রবাহ বা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হয় এবং রক্তচাপ নির্বাহ করতে সাহায্য করে। রক্তপ্রবাহের নিয়ন্ত্রণ করে ব্লাড প্রেসার স্থায়ীভাবে উন্নত হয় বা কমে যায়, যার ফলে সামান্য রক্তচাপ বা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা সমাধান হতে পারে।
২৫. মেদ কমাতে সাহায্য:
কালোজিরা মেদ কমাতে সাহায্য করতে পারে কারণে এটি মেটাবলিজমের প্রক্রিয়া উন্নত করতে পারে। মেটাবলিজম ব্যক্তির শরীরে খাবার ও প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহারের প্রক্রিয়া যা শরীরের শেষে নতুন ঊর্জা উৎপাদন করে এবং ব্যবহৃত ঊর্জা শোষণ করে। এটি মেটাবলিক হরমোনের স্তর বা সার্কাডিয়ান সিস্টেমের কাজ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করতে পারে।
উপরের কালোজিরার উপকারিতা গুলো সুন্দরভাবে দেয়া রয়েছে। যা পড়ার মাধ্যমে আপনি কালোজিরার উপকারিতা সম্পর্কে প্রকৃত জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন। তাছাড়া কালোজিরার উপকারিতা অনেক তবে কালোজিরা যে উপকারিতা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাথে সম্পর্কিত সেগুলো উপরে দেয়া রয়েছে।
কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম
আমরা উপরের অংশ আলোচনা করেছি কালোজিরার উপকারিতা সম্পর্কে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন তোমরা কালোজিরা সেবন করো কেননা কালোজিরা মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের মহা ঔষধ। কিন্তু আমরা অনেকেই কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে অবগত নয়। তাই কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আজকে আপনাদের বিস্তারিত ধারণা দিব। তাহলে চলুন জেনে আসি কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে-
- সর্দি কাশি হলে কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম: সর্দি কাশি হলে কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম হলো "একটি পরিষ্কার কাপড়ের কালোজিরা নিয়ে তা নাকের কাছে ধরে বড় করে শ্বাস টানুন কিছুক্ষণ, এর ঝাঁজ বুকে জমা থাকা কফকে টেনে বার করতে সাহায্য করবে"।
- পেটের সমস্যা হলে কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম: পেটের সমস্যা হলে তাওয়াই ভেজে গুড়া করে নিন তারপর আধা কাপ ঠান্ডা করা দুধে গুড়ো করা কালিজিরার এক চিমটি গুঁড়া মিশিয়ে খালি পেটে প্রতিদিন খেলে আপনার পেটের সমস্যা খুব দ্রুত দূর হয়ে যাবে। তাছাড়া দুধ ঠান্ডা হওয়ায় বদ হজম হবে না উল্টো পেটের সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে কালোজিরার বদলতে।
- শ্বাসকষ্টের কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম: শ্বাসকষ্টের মহাঔষধ বলা হয় কালোজিরা কে। হঠাৎ শ্বাসকষ্টের সমস্যা শুরু হলে কালোজিরা কাপড়ে জড়িয়ে নাকের কাছে নিয়ে গন্ধ নিন। শ্বাসকষ্টের সমস্যা থেকে সাময়িক মুক্তি দিতে পারে এই ঘরোয়া টোটকাটি।
- মাথার চুল পড়া বন্ধ করতে কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম: মাথার চুল পড়া বন্ধের জন্য আপনি কালোজিরার তেল ব্যবহার করতে পারেন। কালোজিরা তেল ব্যবহার করার নিয়ম হলো ১ চামচ নারিকেল তেলের সঙ্গে সমপরিমাণ কালোজিরা তেল মিশিয়ে গরম করে নিন এবং মাথার ত্বকে এই তেল হালকা গরম অবস্থায় ঘষে ঘষে মালিশ করুন। টানা ১ সপ্তাহ এই নিয়ম অনুযায়ী তেল ব্যবহার করলে চুল পড়ার সমস্যা সমাধান হবে।
- মেদ কমাতে কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম: মেদ ভুঁড়ি কমাতে গ্রিন টি বা চা এর সঙ্গে মিশিয়ে নিন কালোজিরার গুঁড়ো। কেননা গ্রিন টি এর সঙ্গে কালোজিরার গুঁড়ো মিশ্রনের ফলে মেটাবলিজম বৃদ্ধি পায় এবং মেদ ভুড়ি কমাতে সহায়তা করে।
- উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম: উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগলে সপ্তাহে একদিন কালোজিরার ভর্তা রাখুন খাবারে। কেননা কালোজিরার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। রক্তচাপের ঔষধের সঙ্গে এই পদ্ধতি বিশেষ কার্যকর।
- তীব্র ব্যথা বাতের ব্যথা কমাতে কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম: কালোজিরা ব্যথা সারানোর অন্যতম উপায়, অনেক দিনের পুরনো ব্যথা বা বাতের ব্যথা কালোজিরা তেল মালিশ করলে অনেক আরাম পাওয়া যায়। তাছাড়া কালোজিরায় ফসফেট, ফসফরাস ও লৌহ উপস্থিতি অধিক পরিমাণে থাকায় রক্তস্বল্পতা রোগীরা খেলে অনেক সহায়তা পেয়ে থাকে।
- দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম: যেসব মায়েদের বুকে পর্যাপ্ত পরিমাণে দুধ নেই তাদের জন্য মহা ঔষধ কালোজিরা। প্রসূতি মায়েরা শোয়ার আগে ৫-১০ গ্রাম কালোজিরা মিহি করে দুধের সাথে খেলে মাত্র ১০ থেকে ১৫ দিনে মধ্যে দুধের প্রবাহ বেড়ে যাবে। তাছাড়া এই সমস্যা সমাধানে কালোজিরা ভর্তা খেলেও ভালো হবে। আবার এক চা চামচ কালোজিরা তেল সমপরিমাণ মধুসহ দৈনিক ৩ বার করে নিয়মিত খেলেও শতভাগ উপকার পাওয়া যাবে।
- দাঁতের ব্যথায় কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম: তাতে ব্যথা হলে কুসুম গরম পানিতে কালোজিরা দিয়ে কুলি করলে তাদের ব্যথা কমে এবং জিব্বা, তালু ও দাঁতের জীবাণু মরে যায়। যার ফলে সপ্তাহখানিক এই নিয়ম অনুসরণ করলে দাঁতের ব্যথা ভালো হয়ে যায়।
- পাইলসের সমস্যায় কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম: পাইলসের সমস্যায় নিয়মিত কালোজিরা খেলে পাইল সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ফাইল হলে কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম হলো ১ চা চামচ মাখন ও সমপরিমাণ তিলের তেল, ১ চা চামচ কালোজিরা তেল সহ প্রতিদিন খালি পেটে ৩-৪ সপ্তাহ খেলে কারন উপকার পাবেন।
আরো অনেক কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু উপরে যে বিষয়গুলো বা সমস্যা গুলোর উপর ভিত্তি করে কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম বলা হয়েছে, তা সাধারণত আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সাথে সম্পৃক্ত সমস্যা যার জন্য সেই সব সমস্যাগুলোর উপর ভিত্তি করে কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বলা হয়েছে। যার মাধ্যমে খুব সহজেই কালোজিরা ব্যবহার করে ঘরোয়া ভাবে সমস্যা গুলো সমাধান করতে পারেন।
কালোজিরার অপকারিতা
কালোজিরার উপকারিতা যেমন অনেক, ঠিক তেমনি কালোজিরার অপকারিতা রয়েছে। যদিও তা সংখ্যায় কালোজিরার উপকারিতা এর তুলনায় অনেক কম। তাই আজ নিম্নে কালোজিরা অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করব। তাহলে চলুন নিম্নে বিস্তারিত জেনে আসি কালোজিরার অপকারিতা সম্পর্কে-
- কালোজিরা মুখ দিয়ে খাওয়া হলে: কালো বীজ সাধারণত খাবারে খাওয়া হয়। কালো বীজের তেল এবং কালো বীজের গুঁড়া 3 মাস পর্যন্ত বেশি পরিমাণে গ্রহণ করলে সম্ভবত নিরাপদ। 3 মাসের বেশি সময় ধরে ব্যবহার করা হলে বড় পরিমাণ নিরাপদ কিনা তা জানার জন্য যথেষ্ট নির্ভরযোগ্য তথ্য নেই। কালো বীজ কিছু মানুষের অ্যালার্জির ফুসকুড়ি হতে পারে। এটি পেট খারাপ, বমি বা কোষ্ঠকাঠিন্যও হতে পারে ।
- যখন ত্বকে প্রয়োগ করা হয়: কালো বীজ তেল বা জেল স্বল্পমেয়াদী ব্যবহার করা সম্ভবত নিরাপদ। এটি কিছু লোকের মধ্যে অ্যালার্জিজনিত ফুসকুড়ি হতে পারে। গর্ভাবস্থা: কালো বীজ সাধারণত খাবারে খাওয়া হয়। কিন্তু গর্ভাবস্থায় খাবারে পাওয়া খাবারের চেয়ে বেশি পরিমাণে গ্রহণ করা সম্ভবত অনিরাপদ। কালো বীজ জরায়ুকে সংকোচন থেকে ধীর বা বন্ধ করতে পারে।
- বুকের দুধ খাওয়ানো: বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় কালো বীজ ব্যবহার করা নিরাপদ কিনা তা জানার জন্য যথেষ্ট নির্ভরযোগ্য তথ্য নেই। নিরাপদে থাকুন এবং ব্যবহার এড়িয়ে চলুন।
- শিশু: কালো বীজের তেল স্বল্পমেয়াদী মুখে এবং ওজন অনুসারে প্রস্তাবিত পরিমাণে গ্রহণ করলে শিশুদের জন্য সম্ভবত নিরাপদ। তা অতিরিক্ত সেবন থেকে শিশুদের বিরত রাখুন।
- রক্তপাতজনিত ব্যাধি: কালো বীজ রক্ত জমাট বাঁধার গতি কমাতে পারে এবং রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়ায়। কালো বীজ রক্তপাতের ব্যাধি আরও খারাপ করতে পারে।
- সার্জারি: কালো বীজ রক্ত জমাট বাঁধতে কমতে পারে, রক্তে শর্করার পরিমাণ কমাতে পারে এবং কিছু লোকের ঘুমের সমস্যা বাড়াতে& পারে। এটি অস্ত্রোপচারের সময় এবং পরে ব্যবহৃত ওষুধগুলিতে হস্তক্ষেপ করতে পারে এবং গুরুতর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। একটি নির্ধারিত অস্ত্রোপচারের কমপক্ষে দুই সপ্তাহ আগে কালো বীজ ব্যবহার করা বন্ধ করুন।
উপরে কিছু সংখ্যক কালোজিরার অপকারিতা উল্লেখ করা হয়েছে, যার মাধ্যমে আপনারা কালোজিরার ক্ষতিকারক দিকগুলো থেকে সাবধানতা অবলম্বন করতে পারে। আশা করি কালোজিরার অপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের বুঝাতে পেরেছি।
শেষ কথাঃ কালোজিরার উপকারিতা ও অপকারিতা - কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম
প্রিয় বন্ধুরা, আজকের আর্টিকেলের মূল বিষয় ছিল কালোজিরার পুষ্টিগুণ কালোজিরার উপকারিতা, কালোজিরার অপকারিতা ও কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে উপরে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়বেন এবং এরকম আরো আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন। আমাদের সাথে শেষ পর্যন্ত থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।